ভৌত রাশি এবং তার পরিমাপ(Physical Quantities and Their Measurements)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - পদার্থবিজ্ঞান - ভৌত রাশি এবং পরিমাপ (Physical Quantities and Their Measurements) | | NCTB BOOK
19
19

পানি ঠাণ্ডা হলে সেটা বরফ হয়ে যায়, গরম করলে সেটা বাষ্প হয়ে যায়—এটা আমরা সবাই জানি। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই এটা দেখে আসছে। এই জ্ঞানটুকু কিন্তু পুরোপুরি বিজ্ঞান হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বলতে পারব কোন অবস্থায় ঠিক কত তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয় কিংবা সেটা বাড়িয়ে কোন অবস্থায় কত তাপমাত্রায় নিয়ে গেলে সেটা ফুটতে থাকে, বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে। তার অর্থ প্রকৃত বিজ্ঞান করতে হলে সবকিছুর পরিমাপ করতে হয়। বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই পরিমাপ করে সব কিছুকে নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করা।

টেবিল ০১ঃSI ইউনিটে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন ভৌত রাশি 

রাশি Unit                একক                 Symbol         
দৈর্ঘ্য meter মিটার 
ভর kilogram কিলোগ্রাম kg 
সময় second সেকেন্ড 
বৈদ্যুতিক প্রবাহ ampere অ্যাম্পিয়ার 
তাপমাত্রা kelvin কেল্ভিন 
পদার্থের পরিমান mole মোল mol 
দীপন তীব্রতা candela ক্যান্ডেলা cd 

এই জগতে যা কিছু আমরা পরিমাপ করতে পারি তাকে আমরা রাশি বলি। এই ভৌতজগতে অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যা পরিমাপ করা সম্ভব। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে, কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আয়তন, ওজন, তাপমাত্রা, রং, কাঠিন্য, তার অবস্থান, বেগ, তার ভেতরকার উপাদান, বিদ্যুৎ পরিবাহিতা, অপরিবাহিতা, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ পরিবাহিতা, অপরিবাহিতা, ঘনত্ব, আপেক্ষিক তাপ, চাপ গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি— অর্থাৎ আমরা বলে শেষ করতে পারব না। এক কথায় ভৌতজগতে রাশিমালার কোনো শেষ নেই। তোমাদের তাই মনে হতে পারে এই অসংখ্য রাশিমালা পরিমাপ করার জন্য আমাদের বুঝি অসংখ্য রাশির সংজ্ঞা আর অসংখ্য একক তৈরি করে রাখতে হবে! আসলে সেটি সত্যি নয়, তোমরা শুনে খুবই অবাক হবে (এবং নিশ্চয়ই খুশি হবে) যে মাত্র সাতটি রাশির সাতটি একক ঠিক করে নিলে সেই সাতটি একক ব্যবহার করে আমরা সবকিছু বের করে ফেলতে পারব। এই সাতটি রাশিকে বলে মৌলিক রাশি এবং এই মৌলিক রাশি ব্যবহার করে যখন অন্য কোনো রাশি প্রকাশ করি সেটি হচ্ছে লব্ধ রাশি। মৌলিক রাশিগুলো হচ্ছে দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ এবং দীপন তীব্রতা। এই সাতটি মৌলিক রাশির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাতটি একককে বলে SI একক, (SI এসেছে ফরাসি ভাষার Systeme International d'Unites কথাটি থেকে) এবং সেগুলো টেবিলে দেখানো হয়েছে। পরের টেবিলে অনেক বড় থেকে অনেক ছোট কিছু দুরত্ব, ভর এবং সময় দেখানো হয়েছে। 

টেবিল : অনেক বড় থেকে অনেক ছোট দূরত্ব, ভর এবং সময় 

    দূরত্ব     m      ভর        kg          সময়          s 
নিকটতম  গ্যালাক্সি 6×1019           আমাদের গ্যালাক্সি        2×1041         বিগ ব্যাংয়ের সময় 4×1017           

নিকটতম 

নক্ষত্র 

4×1016সূর্য 2×1030 ডাইনোসরের ধ্বংস 2×1014
সৌরজগতের ব্যাসার্ধ 6×1012পৃথিবী  6×1024মানুষের জন্ম 8×1012
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ  6×106জাহাজ 7×107এক দিন 9×104
এভারেস্টের উচ্চতা  9×103হাতি 5×103মানুষের হৃৎস্পন্দন 
ভাইরাসের দৈর্ঘ্য  1×10-8মানুষ 6×101মিউওনের আয়ু 2×10-6
হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ 5×10-11ধূলিকণা 7×10-7স্পন্দনকাল: সবুজ আলো 2×10-15
প্রোটনের ব্যাসার্ধ 1×10-15ইলেকট্রন 9×10-31স্পন্দনকাল: এক MeV গামা রে 4×10-21

 

 পরিমাপের একক (Units of Measurements) 

এই এককগুলোর ভেতর সেকেন্ড, মিটার এবং ক্যান্ডেলার পরিমাপ আগেই কয়েকটি ধ্রুব দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। 2019 সালের মে মাস থেকে কিলোগ্রাম, কেলভিন, মোল এবং অ্যাম্পিয়ারকেও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক কিছু ধ্রুব ব্যবহার করে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কাজেই এখন পৃথিবীর যে কোনো ল্যাবরেটরিতে এই ধ্রুবগুলো পরিমাপ করে সেখান থেকে সবগুলো এককের পরিমাপ অনেক সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে। সাতটি একক পরিমাপ করার জন্য যে মৌলিক ধ্রুবগুলোর মান চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো 1.03 টেবিলে দেখানো হয়েছে। 

টেবিল 1.03: সাতটি ধ্রুবের নির্দিষ্ট করে দেওয়া মান 

     ধ্রুব     মান 
আলোর বেগ (c) 299,792,458 meter / second 
প্লাঙ্কের ধ্রুব (h) 

6.626 070 15×10-34joule.second

 

ইলেকট্রনের চার্জ (e) 1.602176634×10-19coulomb
Cs133 পরমাণুর স্পন্দন (ΔVCs)              9,192,631,770 hertz                                     
বোল্টজম্যান ধ্রুব (KB 1.380649×10-23joule/kelvin 
এভোগাড্রোর ধ্রুব (NA6.02214076×10-23 particles/mole 
বিকিরণ তীব্রতা (KCD683 lumens / watt 

সেকেন্ড (s): সিজিয়াম 133 (Cs-133) পরমাণুর 9,192, 631,770 টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে পরিমাণ সময় নেয় সেটি হচ্ছে এক সেকেন্ড। 

মিটার (m): শূন্য মাধ্যমে এক সেকেন্ডের 299,792,458 ভাগের এক ভাগ সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেটি হচ্ছে এক মিটার। 

কিলোগ্রাম (kg): প্লাঙ্কের ধ্রুবকে 6.626070×10-31m2/s দিয়ে ভাগ দিলে যে ভর পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে এক কিলোগ্রাম। 

অ্যাম্পিয়ার (A): প্রতি সেকেন্ডে 11.602176634×10-19 সংখ্যক ইলেকট্রনের সমপরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হলে সেটি হচ্ছে এক অ্যাম্পিয়ার। 

মোল(Mol): যে পরিমাণ বস্তুতে এভোগাড্রোর ধ্রুব 6.02214076×1023সংখ্যক কণা থাকে সেটি হচ্ছে এক মোল । 

কেলভিন (K): যে পরিমাণ তাপমাত্রার পরিবর্তনে তাপশক্তির 1.380649×10-23 joule পরিবর্তন হয় সেটি হচ্ছে কেলভিন। 

ক্যান্ডেলা (candela):  সেকেন্ডে 540×1011বার কম্পনরত আলোর উৎস থেকে যদি এক স্টেরেডিয়ান (Sterndian ) ঘনকোণে এক ওয়াটের 683 ভাগের এক ভাগ বিকিরণ তীব্রতা পৌঁছায় তাহলে সেই আলোর তীব্রতা হচ্ছে এক ক্যান্ডেলা। 

এক মিটার বলতে কতটুকু দূরত্ব বোঝায় বা এক কেজি ঠিক কতখানি ভর, কিংবা এক সেকেণ্ড কতটুকু সময়, এক ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রা কতটুকু উত্তাপ কিংবা এক অ্যাম্পিয়ার কতখানি কারেন্ট অথবা এক মোল পদার্থ বলতে কী বোঝায় বা এক ক্যান্ডেলা কতখানি আলো সেটা সম্পর্কে তোমাদের সবারই একটা বাস্তব ধারণা থাকাউচিত! এই বেলা তোমাদের সেই বাস্তব ধারণাটা দেওয়ার চেষ্টা করে দেখা যাক। তোমাদের শুধু জানলে হবে না, খানিকটা কিন্তু অনুভবও করতে হবে। সাধারণভাবে বলা যায়: 

• স্বাভাবিক উচ্চতার একজন মানুষের মাটি থেকে পেট পর্যন্ত দূরত্বটা মোটামুটি এক মিটার । 

এক লিটার পানির বোতলে কিংবা চার গ্লাসে যেটুকু পানি থাকে তার ভর হচ্ছে এক কেজির কাছাকাছি। 

‘এক হাজার এক’ এই তিনটি শব্দ বলতে যেটুকু সময় লাগে সেটা মোটামুটি এক সেকেন্ড! 

বলা যেতে পারে তিনটা মোবাইল ফোন একসাথে চার্জ করা হলে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। (মোবাইল ফোন 5 ভোল্টের কাছাকাছিতে চার্জ করা হয়। তাই এখানে খরচ হবে 5 ওয়াট। যদি বাসার লাইট, ফ্যান, ফ্রিজে 220 ভোল্টের কিছুতে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তখন কিন্তু খরচ হবে 220 ওয়াট!) 

হাত দিয়ে আমরা যদি কারো জ্বর অনুভব করতে পারি, বলা যেতে পারে তার তাপমাত্রা এক কেলভিন বেড়েছে। 

মোলটা অনুভব করা একটু কঠিন, বলা যেতে পারে একটা বড় চামচের এক চামচ পানিতে মোটামুটি এক মোল পানির অণু থাকে। এক কাপ পানিতে দশ মোল পানি থাকে। 

একটা মোমবাতির আলোকে মোটামুটিভাবে এক ক্যান্ডেলা বলা যায়। 

দেখতেই পাচ্ছ এর কোনোটাই নিখুঁত পরিমাপ নয় কিন্তু অনুভব করার জন্য সহজ। যদি এই পরিমাপ নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাও, তাহলে ভবিষ্যতে যখন কোনো একটা হিসাব করবে, তখন সেটা নিয়ে তোমাদের একটা মাত্রাজ্ঞান থাকবে।

Content updated By
Promotion